।। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বদলি বাণিজ্যের হোতা কুড়িগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক (ডিডি) মোদাব্বের হোসেন অবশেষে বদলি হয়েছেন। এ খবরে জেলাবাসী খুশি হলেও ভুক্তভোগীদের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, বরাদ্দের টাকা লুটপাট, ফিল্ড লেভেল থেকে মাসোহারা আদায় ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তের দাবি বহুদিন ধরে করে আসছিল সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে পরিবার পরিকল্পনার ডিডি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় অনিয়ম আর বদলি বাণিজ্য। অফিসে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজে সহযোগিতা করেন অফিসে নিয়োজিত কর্মচারীরা। নিজের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। বিল-ভাউচার থেকে শুরু করে ওষুধ বিক্রি পর্যন্ত সবই চলত সেই সিন্ডিকেটের নিয়মে। শুরুতে দু’একজন প্রতিবাদ করলে তাদের বদলি করে দেওয়া হতো দুর্গম চরাঞ্চলে। ফলে অবাধে চলতে থাকে লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম। এভাবে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সুন্দরী নারী কর্মীদের তিনি প্রায়ই অফিস সময়ের পরে থাকার ঘরে ডেকে পাঠাতেন। কথা না শুনলে বদলির হুমকি দেওয়া হতো। তার সময়ে কমপক্ষে ১০০ জন স্টাফকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়ার আগের মাসেই প্রায় ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কাজে সহযোগিতা করেন তার অফিস সহকারী।
বদলি ও তদবির বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ মাহবুবুর রহমান মিমও। প্রতি মাসে অধস্তন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করা হতো। না দিলে তাদের নাজেহাল করা হতো।
অভিযোগ রয়েছে, ডাক্তার মঞ্জুর ও পরিসংখ্যান সহকারী মাহবুবুর রহমান মিমকে সাথে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন ডিডি মোদাব্বের। সহকারী পরিচালক (সিসি) পদে নিয়োগ বাণিজ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা এবং বদলি বাণিজ্যে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বহুবার অভিযোগ দেওয়ার পর ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তর থেকে তার একনায়কতন্ত্র বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, ২০২৫ সালের ৫-৬ জানুয়ারি ভুক্তভোগীরা আহ্বায়ক কমিটির কাছে অভিযোগের প্রমাণসহ সাক্ষ্য দিতে গেলে ডিডি ভুক্তভোগীদের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেন। তিনি দাবি করেন, তদন্ত কমিটি তার কেনা, রংপুর বিভাগের পরিচালক মোর্শেদ কামাল তার বন্ধু, অধিদপ্তরের প্রশাসন তার কেনা, মন্ত্রণালয়ও তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি নিজেকে সাবেক মহাপরিচালকের আত্মীয় এবং শেখ হাসিনার জামাই ওয়াজেদ মিয়ার আত্মীয় বলেও পরিচয় দিতেন। পরে আবার নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিতেন।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন।
অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম পরিবার পরিকল্পনার ডিডি মোদাব্বের হোসেনকে বদলি করে পঞ্চগড়ে পাঠানো হয়। এতে কুড়িগ্রামবাসী স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিডি মোদাব্বের হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে ডিডি পদ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে কেউ সাড়ে চার বছর এক জেলায় থাকতে পারেনি। আমি ভালো কাজ করেছি বলেই কর্তৃপক্ষ আমাকে এতদিন রেখেছিল। নিয়ম অনুযায়ী আমার বদলি হয়েছে পঞ্চগড়ে।”