বিশ্বভ্রমণে সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি নাজমুন নাহার ১৩৫তম দেশ ভ্রমণের রেকর্ড করেছেন। গতকাল রবিবার বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে দেশ ভ্রমণের ইতিহাসের গড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি কোস্টারিকার তামারিন্দ শহরে অবস্থান করছেন।
এবারের অভিযাত্রায় তিনি ম্যাপ করেছিলেন ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে ক্যারিবীয় ও প্যাসিফিকের সমুদ্রের কোস্ট লাইনের দেশ গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও কোস্টারিকা পর্যন্ত।
ইতিহাসের সেরা সাহসী নারী নাজমুন নাহার। যিনি নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখেছেন ছোটবেলা থেকেই। যে পথ চলতে জানে, নিজে জাগ্রত হতে জানে, অন্যকে জাগ্রত করতে জানে, তার যাত্রা পথে যত বাধাই আসুক না কেন তিনি সবকিছুর অতিক্রম করে চলছেন পৃথিবীর পথে পথে।
নাজমুন নাহার রাতের অন্ধকারে পার হয়েছিলেন গুয়াতেমালা থেকে এল সালভাদরের সীমান্ত। সেখানে এল তুনকো শহরে কিছুদিন থাকার পর পাড়ি দিয়েছিলেন অন্য বাকি সব দেশগুলোতে। এল সালভাদোর থেকে হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও কোস্টারিকার সীমান্তগুলো একা একা সড়কপথে পাড়ি দিয়ে তিনি এখন অবস্থান করছেন কোস্টারিকার তামারিন্দ শহরে। বাংলাদেশ থেকে তামারিন্দ শহরে অবস্থানরত নাজমুন নাহারের সাথে কথা হয় তার ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে এবারের পাঁচটি দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
নাজমুন নাহার বলেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অনেক কঠিন সীমান্ত থেকেও কঠিনতর সীমান্ত এলাকা ছিল এই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। সড়ক পথের অবস্থা ভালো থাকলেও এখানে অনেক ধরনের ছিনতাই, খুন, কিডন্যাপ, মাদক চালান হওয়ার কারণে এখানকার দেশগুলো সফর অতটা সহজ ছিল না। গুয়াতেমালার শহরে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, তারপরও এইসব দেশগুলির পথে পথে অনেক ট্যুরিস্টদের সাথে আমার দেখা হয়েছে। এই দেশগুলোতে সারা পৃথিবী থেকে প্রচুর টুরিস্ট আসে। এই দেশগুলোতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, প্যাসিফিক এবং ক্যারিবীয় সমুদ্র সৈকত, ঘনসবুজ ম্যানগ্রোভ জঙ্গল, নীল সমুদ্রের পানি, ঐতিহাসিক ধর্মীয় গির্জা, এই সবকিছুই সারা পৃথিবীতে থেকে আসা টুরিস্টদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
তারই বর্ণনা করতে গিয়ে নাজমুন নাহার গুয়াতেমালার এন্টিগুয়া, ‘সেরো দে লা ক্রুজ’, লেক আতিতলান, আগুয়া, ফিউগো এবং প্যাচায়া নামক আগ্নেয়গিরিগুলো দর্শন করেন। এর মধ্যে তার দেখা দেখা ভলকান পাচায়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভলকানো।
নিকারাগুয়ার সেরো নিগ্রো ভলকানিক সামিট, তাদের পবিত্র ধর্মীয় শহর লেয়ন ও কোস্টারিকার কনচাল, পেনকা, হারমোচা, নাকাচকোলো, এল কোকো সমুদ্র সৈকতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেন, বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সাথে দলবেঁধে তিনি এসব দর্শনীয় স্থানগুলো অভিযাত্রা করেছেন।
জানা গেছে, গুয়াতেমালার স্পেনীয় ঔপনিবেশিক ‘এন্টিগুয়া’ শহর থেকে সড়ক পথেই এ অভিযাত্রা শুরু করেন নাজমুন নাহার। তারপর গুয়েতেমালার সান্তা লুসিয়া, জালপাতাগুয়া, ভিলা নোয়েভা, এল সারিনাল, সুইনাপা, লস এসক্লবাস পার হয়ে গুয়াতেমালার ল্যান্ড বর্ডার ভাল্লে নোয়েবো থেকে ‘রিও পাজ’ নদী পার হয়ে এল সালভাদরের লাস সিনেমাস ল্যান্ড কাস্টম বর্ডারে পৌঁছান তিনি। তারপর সান্তা আনা, এল কঙ্গো, সানতা লুসিয়া ও লউরদেস অতিক্রম করে তিনি পৌঁছান মধ্য আমেরিকার আরেক দেশ এল সালভাদর এর ‘এল তুনকো’ সামুদ্রিক শহরে। এরপর এল সালভাদরের সীমান্ত শহর লা ইউনিয়ন পার হয়ে তিনি অতিক্রম করেন হন্ডুরাসের সান লোরেঞ্জো, প্লায়া পূনতা রাতন, সান মিগুয়েল, চলুতেকা।
হন্ডুরাসের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিকারাগুয়ার লেয়ন শহরে পৌঁছান নাজমুন নাহার। এরপরে লেয়ন শহর থেকে নিকারাগুয়ার রাজধানীর শহর মানানগুয়া। তারপর ইসলা জাপ্যাতেরা হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা পেনাস ব্লানকাসে পৌঁছান তিনি।
তারপর তিনি ক্যাসেল ন্যাশনাল পার্ক হয়ে কোস্টারিকার লাইবেরিয়া শহরে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেন বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী ছোট ছোট সামুদ্রিক টাউন ব্রাসিলিতো, প্লায়া কোকো, পেনকা, হারমোসা, তামারিন্দে। এভাবেই বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে সড়ক পথে অভিযাত্রা করতে করতে ১৩৫তম দেশ ভ্রমণ শেষ করেন নাজমুন নাহার।
এর আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আমেরিকার প্যাসিফিক সমুদ্রের পাশ ঘেঁষে যাওয়া দেশ কলম্বিয়া থেকে অভিযাত্রা শুরু করে ইকুয়েডর পেরু, বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, ব্রাজিল প্যারাগুয়ে হয়ে পানামা পর্যন্ত সফর করেছিলেন নাজমুন নাহার। ২০১৫ সালে তিনি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ জামাইকা, কিউবা, ডোমিনিকান রিপাবলিকসহ অন্যান্য দেশগুলো ভ্রমণের সময় মেক্সিকো থেকে বেলিজ পর্যন্ত সড়ক পথে সফর করেছিলেন।