ফুলবাড়ীতে মামলা না তোলায় যুবককে পিটিয়ে পা-হাত ভেঙ্গে ভিটেছাড়ার হুমকির অভিযোগ

অপরাধ জাতীয় রংপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুরনো মামলার জেরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি রবিদাস সম্প্রদায়ের এক যুবককে পিটিয়ে হা-পা ভেঙ্গে দিয়ে ভিটাছাড়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। আহত যুবকের পিঠে, পেটে ও মুখে মারাক্তক আঘাত পেয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নেওয়াশী বাজার এলাকায়। আহত যুবক সুভাষ চন্দ্র রবিদাস (২৭) উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নেওয়াশী বাজার এলাকায় শ্যামলাল রবিদাসের ছেলে। এ ঘটনায় আহত যুবকের বাবা শ্যামলাল রবিদাস শুক্রবার রাতে ফুলবাড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

আহত সুভাষ চন্দ্র রবিদাস বলেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার রাত ৯ টার দিকে তিনি নেওয়াশী বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে বাড়ী ফিরছিলেন। পথিমধ্যে নেওয়াশী বাজার সংলগ্ন ব্রিজের ওপর তাদের প্রতিপক্ষ রাবাইটারী এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে সিরাজুল ইসলাম পাঠান (৩৫) ও মৃত আজগার আলী মাস্টারের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৪) তার ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। তারা কাঁঠের লাঠি দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করতে থাকলে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফুলবাডী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে আসেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তারা আমার ওপর হামলার সময় চিৎকার করে করে সিরাজুল ইসলাম পাঠান বলেন মামলা তুলে না নিলে প্রাণ মেরে ফেলা হবে জানান সুভাষ চন্দ্র রবিদাস।

আহত সুভাষ চন্দ্র রবিদাসের মা সাজমতি রবিদাস বলেন, দুই বছর আগে প্রতিবেশী বজলার রহমানের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়। সে সময় রাতের আঁধারে বজলার রহমানের পক্ষে সিরাজুল ইসলাম পাঠানসহ একদল সন্ত্রাসী তার ছেলে সুভাষকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে গুরুতর আহত করেন। সুভাষ কোনোরকম ভাবে প্রাণে বেঁচে যায়। এ ঘটনায় সেই সময় ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান”বেশ কিছুদিন ধরে বজলার রহমান ও সিরাজুল ইসলাম পাঠন মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে চাপ দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নেওয়ায় সিরাজুল ইসলাম পাঠান আবারো আমার ছেলেকে মারপিট করে হা-পা ভেঙ্গে দিয়েছন বলে তিনি জানান।

সুভাষ চন্দ্রের ছোট বোন কলেজছাত্রী পূর্ণিমা রবিদাস (১৮) বলেন, ওই চক্রটি আমাদেরকে ভিটে ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। “আমাদের বসতভিটার ১৩ শতাংশ জমি ছাড়া কোন সম্পদ নেই। আমাদের বসতভিটার ওপর কু-নজর পড়েছে। “দাদা এখনো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিনিয় আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে ওই চক্রটি। আমরা বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছি। কেউ আমাদের পাশে নেই। এঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানান তিনি।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আশরাফুল আলম ও সমাজকর্মী ফাতেমা বেগম জানান, সিরাজুল ইসলাম পাঠান ও রফিকুল ইসলাম যেভাবে সুভাষ রবিদাসকে প্রচন্ড মারপিট করেছে। মারপিটের সময় কাউকে যেতে দেননি। দুই বছর আগেও তাকে তাদের দ্বারা হামলা শিকার হন। এখন সুবাশসহ ওই পরিবারটি খুবই অসহায় বলে জনান তারা।

তবে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম পাঠানে সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সুভাষ রবিদাসকে আপনি যত বেশি শুনেছেন তত বেশি মারপিট করা হয়নি। যাতে মামলাটা তুলে নেয় সেজন্য সামান্য মারপিট করেছি। তবে মামলাটি তুলে নিলে সুবাশের সাথে আর কোন দ্বন্দ্ব থাকবেনা। সুভাষ যদি কোন কারণে মামলা তুলে না নেয় তাহলে কি আবারও তাকে মারপিট করা করবেন কি এমন প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত পাঠান জানান তা এখনে বলতে পারবো না। আপনার সাথে পরে কথা হবে।

এ দিকে বজলার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না। মিথ্যা ও হয়রানিমুলকভাবে তার ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে। অতীতের ঘটনার সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন না। সুভাষ রবিদাসের পরিবারকে তিনি অথবা তার লোকজন কখনই হুমকি দেনদিন বলে তিনি দাবি করেন।

ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ জানান, এঘটনায় শুক্রবার রাতে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন সুভাষের বাবা শ্যামলাল রবিদাস। শনিবার দুপুর ১২ টায় পুলিশ সরেজমিনে যান। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *