আনোয়ার হোসাইন তন্ময়, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় এক যুগ আগে গুটিকয়েক কাপড় ব্যবসায়ী দূরদূরান্ত থেকে কাপড় নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জামে মসজিদের সামনের রাস্তার দুধারে বসে থাকতেন বিক্রির জন্য। এই হাটে কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় লোকজন এখান থেকে কাপড় কিনতে শুরু করেন। আর ভৈরবসহ পার্শ্ববর্তী হাওর অঞ্চলের নারীরা দাম কম পাওয়ায় এখান থেকে কাপড় কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে লাভবান হন। ধীরে ধীরে জমজমাট হতে শুরু করে এই হাট। বর্তমানে রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটারে জায়গা জুড়ে প্রসার হয়েছে হাটের।
প্রতি বুধবার বসে সাপ্তাহিক কাপড়ের এই হাট। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাটে বিক্রি হয় নানা রকম কাপড়। এই হাটের মূল ক্রেতা হলেন নারীরা। স্থানীয়দের কাছে এই হাট ‘মহিলাদের কাপড়ের বাজার’ বা ‘বউবাজার’ নামেই পরিচিত।
হাট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই রয়েছে নারী ক্রেতাদের ভিড়। হাটে কামিজ, ফ্রক, থান কাপড়, শাড়ী, লুঙ্গি, ওড়না, থ্রি-পিছ, পায়জামা, সালোয়ার, বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। আশেপাশের উপজেলা আশুগঞ্জ, নবীনগর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, রায়পুরা, বেলাব, কটিয়াদী, সরাইলসহ হাওর অঞ্চলের কয়েকটি এলাকা থেকে নারীরা এসব কাপড় কিনতে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামের অনেক নারী এ হাট থেকে কাপড় কিনে বাড়িতে সেলাই করে বিক্রি করেন। এতে করে তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এ হাটে বিক্রি করে ভালো আয় করছে। সপ্তাহের একদিন বুধবার ভৈরবের এই কাপড়ের হাটে কমপক্ষে ৩০০-৪০০টি দোকান বসে। প্রতি হাটে কোটি টাকার বেচাকেনা হয় বলে জানান দোকানিরা। তবে খোলা জায়গায় হওয়ার কারণে বৃষ্টির দিনে খুব সমস্যায় পড়তে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তাছাড়া অল্প জায়গায় ভিড় বেশি হওয়ায় নারীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।
আশুগঞ্জ থেকে কাপড় কিনতে আসা পারভিন বেগম জানান, এই বাজার থেকে কাপড় কিনে নিয়ে বাড়িতে সেলাই করে লোকজনের কাছে বিক্রি করেন তিনি। এই কাজ তাকে সংসার চালাতে সহায়তা করে।
হাটের পাইকারি কাপড় বিক্রেতা মাসুদ মিয়া বলেন, ‘প্রতি বুধবার ভৈরবের এই কাপড়ের বাজারে কাপড় বিক্রি করতে আসি। এখানে বিভিন্ন এলাকার লোকজন পাইকারি ও খুচরা কাপড় কিনতে আসে।’
ভৈরবের পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু জানান, ভৈরবের আশেপাশের কয়েকটি জেলার ক্রেতারা কাপড় কিনতে এই হাটে আসেন। এই বাজারে মহিলাদের বাহারি নানা ধরণের কাপড় পাওয়া যায়। মহিলাদের কাপড়ের বাজার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। তাই এ বাজারকে স্থায়ীভাবে তৈরি করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।